ঠান্ডা লড়াইয়ের (Cold Fight) প্রকৃতি : মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ওয়াশিংটন পোস্টে কয়েকটি ধারাবাহিক প্রবন্ধ লেখার সময় ‘Cold War’ (ঠান্ডা যুদ্ধ) শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন (১৯৪৭ খ্রি.)। ওই বছরই মার্কিন কূটনীতিবিদ বার্নার্ড বারুচও ‘Cold War’ শব্দটি ব্যবহার করেন। এর অনেক পরে (১৯৫৫ খ্রি., ১৮ জুলাই) জেনেভাতে, রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী বুলগানিনও ‘Cold War’ শব্দটি উল্লেখ করেন।
ঠান্ডা লড়াই আসলে কোনো সশস্ত্র যুদ্ধ নয়, এটি হল মতাদর্শগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের কুফল। পিটার ক্যালভোকরেস তাঁর ‘World Politics Since 1945’ গ্রন্থে এই মত প্রকাশ করেছেন-সোভিয়েত গোষ্ঠী ও পশ্চিমি শক্তির মধ্যেকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আদর্শগত সংঘর্ষবিহীন নিরবচ্ছিন্ন তীব্র প্রতিযোগিতাকে ঠান্ডা লড়াইরূপে সংজ্ঞায়িত করা যায়।
ঠান্ডা লড়াইয়ের (Cold Fight) প্রকৃতি –

বিশ্বজুড়ে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে-
যুদ্ধপরিবেশ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয় পক্ষই নিজেদের মধ্যে সরাসরি কোনো শক্তিপরীক্ষায় অবতীর্ণ না হলেও এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশগুলিকে পরোক্ষভাবে মদত দিয়ে যুদ্ধের বাতাবরণ বজায় রেখেছিল। এসময় উভয় পক্ষই বিপজ্জনক পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় নেমেছিল।
প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি
অস্ত্র প্রতিযোগিতার দরুন উভয় পক্ষেরই বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছিল।
সংঘর্ষহীনতা
উদ্দেশ্যমূলক প্রচার, অন্তর্ঘাত, এমনকি
সীমিত কিছু নাশকতামূলক কাজকর্মকে ঠান্ডা লড়াই উৎসাহ দিলেও কোনো ক্ষেত্রেই তা শেষপর্যন্ত ব্যাপক সংঘর্ষে পরিণত হয়নি। উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা থাকলেও যুদ্ধের মর্মান্তিক পরিণতির ব্যাপারে উভয়েই ছিল সতর্ক। ফলে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ ঘটেনি।
আদর্শগত দ্বন্দ্ব
ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্ব দেখা যায়। একদিকে সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদের প্রসার অপরদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী আগ্রাসনে তীব্র আদর্শগত দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
ভৌগোলিক বিভাজন
ঠান্ডা লড়াইয়ের রাজনীতি ভৌগোলিক বিভাজন ঘটায়। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো, মেডো, সেন্টো, সিয়েটো, অ্যানজাস প্রভৃতি রাষ্ট্রজোট গঠিত হলে তার প্রত্যুত্তরে রাশিয়া গঠন করে, ওয়ারশ চুক্তি সংস্থার মতো রাষ্ট্রজোট। ফলে স্পষ্টতই ভৌগোলিক দিক থেকে বিভাজন ঘটে যায়।
উপসংহার
ঠান্ডা যুদ্ধের প্রকৃতি বিশ্লেষণে বলা যায় যে, এটি আসলে যুদ্ধও নয়, শান্তিও নয়। যুদ্ধ ও শান্তির মাঝামাঝি এক অস্বস্তিকর অবস্থা। তাই বলা চলে ঠান্ডা যুদ্ধ হল এক যুদ্ধহীন যুদ্ধ। ঠান্ডা যুদ্ধের অপর নাম দেওয়া হয়েছিল স্নায়ু যুদ্ধ (War of Nerves)।