পরিবেশ (The environment)অবনমনের সম্পর্ক : এক দীর্ঘ ঐতিহাসিক বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীতে মানবসভ্যতার অগ্রগতি ঘটেছে। পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে মানুষ তার যাবতীয় কাজকর্মের মধ্য দিয়ে সভ্যতাকে যেমন অগ্রগামী করেছে, তেমনি এই কালের যাত্রাপথে বিভিন্নভাবে পরিবেশের অবনমনও ঘটিয়েছে, যেমন-
মানবসভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে পরিবেশ (The environment) অবনমনের সম্পর্ক –

প্রাক্-ঐতিহাসিক যুগ
সভ্যতার এই যুগে মানুষ পশু শিকার, ফলমূল সংগ্রহ এবং বিভিন্ন যাযাবর বৃত্তির মধ্যে দিয়ে অরণ্য কিংবা গুহাবাসী হয়ে জীবনযাপন করত। সম্পূর্ণ প্রকৃতিনির্ভর মানুষের যাবতীয় চাহিদা এই যুগে খুবই সামান্য ছিল।
ঐতিহাসিক যুগ
আগুনের ব্যবহার, পশুপালন এবং কৃষিকাজের মধ্যে দিয়ে মানুষ ঐতিহাসিক যুগে প্রবেশ করে। চাকার আবিষ্কার মানবসভ্যতার গতি বাড়িয়ে দেয়। এই সময় পর্যন্ত পরিবেশের যে সামান্য ক্ষতি হত তা হোমিওস্ট্যাটিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে নিজে থেকেই পূরণ হয়ে যেত।
শিল্পবিপ্লবের যুগ
কিন্তু মানবজাতির অপরিসীম চাহিদা ও দুর্নিবার লোভ তাকে বিপথে চালু করেছে, যার ফলস্বরূপ সে তার পরিবেশের ধ্বংসসাধনে লিপ্ত হয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপের শিল্পবিপ্লব যেমন একদিকে আধুনিক সভ্যতার সূচনা করেছিল তেমনি অপরদিকে পরিবেশ অবনমনের দ্বার খুলে দিয়েছিল।
সর্বাধুনিক যুগ
উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে পৃথিবীতে সর্বাধুনিক যুগ আত্মপ্রকাশ করে। এ যুগে সারা বিশ্বে শিল্প, বিজ্ঞান, চিকিৎসার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনসংখ্যা। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে গড়ে উঠতে থাকে শহর-নগর, প্রসারলাভ করতে থাকে কৃষিভূমি, তৈরি হতে থাকে রাস্তাঘাট, শিল্পকারখানা। ফলস্বরূপ, ধ্বংস হতে থাকে অরণ্য। মানুষ নির্বিচারে ব্যবহার করতে শুরু করে জল, মাটি, অরণ্য, কয়লা, খনিজ তেল, লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি।
এর ওপর বিংশ শতাব্দীর দুই বিশ্বযুদ্ধ, সামরিক অস্ত্র (পারমাণবিক অস্ত্র) পরীক্ষা, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিবেশের অবনমনকে একধাপে অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। সভ্যতার অগ্রগতি ও শিল্পায়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৌড়ে পরিবেশের যে বিপুল পরিবর্তন হচ্ছে তা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, যার ক্ষতিকর প্রভাব সমগ্র জীবকুলের ওপর অভিশাপরূপে নেমে আসছে।
====>>> কলকাতা বন্দরের গুরুত্ব